September 20, 2024, 9:42 am

নোটিশ:
সংবাদদাতা আবশ্যক
সংবাদ শিরোনাম:
উপজেলা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ। নিউ হোপ এ্যানিমেল নিউট্রিশন কোম্পানীর পক্ষ হতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের জন্য গো- খাদ্য প্রেরণ। বগুড়ার শাজাহানপুরে জমি নিয়ে বিরোধে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫। ঘোড়াঘাটে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত। কাহালুর মাঝপাড়া জাগ্রত মানবসেবা সংস্থার উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর উদ্বোধন। তালোড়ার ডাঃ শফিউল করিমের প্রাণ নাশের চেষ্টা থানায় জিডি। কাহালুর এরুইল বাজার ইসলামী ব্যাংক এজিন্ট শাখার গ্রাহক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা। বগুড়ার কাহালুতে নকল সোনা মূর্তি সহ ২ জন গ্রেফতার। কাহালুর ইউএনও’র স্বেচ্ছাচারিতায় বিতর্কিত কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন বগুড়ায় হক্বের দাওয়াত সিদ্দীক্বিয়া দরবার ও সুন্নতী জামে মসজিদের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত।

শেরপুরে কেঁচো সার তৈরি করে সফল সংগামী নারী রেশমা

অশোক সরকার, শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধিঃ কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার জীবন সংগামী নারী রেশমা। তার তৈরি এ সার জমিতে ব্যবহার করে এলাকার কৃষক বিষমুক্ত ফসল ও সবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন।সুরাইয়া ফারহানা রেশমা শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের বোংগা গ্রামের পরিবার পরিকল্পনা সহকারী হুসনেয়ারা বেগমের মেয়ে। তিনি এখন কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সুপাড়ি, পেপে ও সবজির আবাদ ছাড়াও শুধু কেঁচো কম্পোস্ট থেকেই প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।
রেশমার সাথে কথা বলে জানা যায় তার সংগ্রামী জীবনের কথা।অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা রেশমার। বাবা মায়ের মধ্যে সম্পর্কটাও ভাল ছিলনা। রেশমার যখন ২ মাস বয়স তখন তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ৫ বছর বয়সী রেশমাকে নিয়ে তার মা বাবার বাড়ি চলে আসেন। সংসার পরিচালনার তাগিদে রেশমার মা হুসনেয়ারা বেগম পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ১৫০০ টাকা বেতনে মাঠকর্মী হিসেবে যোগদান করেন। তার বাবা তাদের কোন খবর রাখতেন না। এমনকি রেশমার কোন দায়িত্বও নেয়নি তিনি। তাই মায়ের কাছেই বেড়ে উঠে সে। অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ১৫ বছর বয়সের তার বিয়ে হয়। ভাগ্যক্রমে তার স্বামী হয় মাদকসেবী ও জুয়ারু। জুয়া খেলার টাকার জন্য অমানসিক নির্যাতন চালাতো রেশমার উপর। বাধ্য হয়েই স্বামীকে তালাক দিয়ে মায়ের কাছে চলে আসে সে।
এরপর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রেশমার সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ধৈর্য এবং সততার সঙ্গে নিজের কর্ম প্রচেষ্টায় এখন সেই দিন পাল্টে গেছে তার। বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রির মাধ্যমে রেশমা নিজেই নিজের সংসার গড়িয়েছেন। সখের বসে ২০১৬ সালে দুইটি গরু পালন করেন তিনি। সেই গরুর মল কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তায় মগ্ন থাকে রেশমা। পরে ২০১৭ সালে মাত্র একটি সিমেন্টের চাকে কেঁচো দিয়ে শুরু করেন জীবনযুদ্ধের পথচলা। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তার ১৩৫ টি চাক ও ৩০ টি ক্যারেটে কেঁচো রয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত সার ও কেঁচো বিক্রি করে মাসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা আয় করেন রেশমা। সেই টাকা ছাড়াও সুপাড়ি, পেপে বিভিন্ন সবজির চাষ ও গরু লালন পালন করে এখন ভালোই চলছে তার সংসার।
উদ্যোক্তা রেশমা জানান, বাবার অভাবের সংসার থেকে স্বামীর সংসার পর্যন্ত কখনও অভাব পিছু ছাড়েনি। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পরে ভাবলাম নিজেই উদ্যোক্তা উন্নয়নের কোনো কাজ করবো। যা দিয়ে নিজের গতি ফেরানো যাবে। এ ভাবনা অনুসারেই সুযোগ পেয়ে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নিই। এরপর নিজ বাড়িতেই শুরু করি কম্পোস্ট সার তৈরির কাজ। রাসায়নিক সার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়া রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নানান জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রাসায়নিক সার জমিতে মাত্রা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। তাই আমি যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী থেকে প্রশিক্ষন গ্রহন করে প্রাকৃতিকভাবে কেঁচো সার তৈরী করে বিক্রি করছি। এই সারের ফসল আমি নিজেও খাচ্ছি এবং অন্যদেরও খাওয়ানের চেষ্টা করছি। এই কাজে আমি সরকারের পাশাপাশি সর্ব সাধারণের সহযোগিতা কামনা করছি।
শেরপুর উপজেলা মহিলা বিষযক কর্মকর্তা সুবির কুমার পাল জানান, আমি সুরাইয়া ফারহানা রেশমার কৃষি ও কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন পদ্ধতি নিজে দেখেছি। একজন সংগ্রামী মেয়ের চেষ্টায় শূন্য থেকে সফলতা অর্জন দেশের কৃষক ও কৃষাণীদের জন্য অনুকরণীয়। যখন দেশের অগণিত কৃষক কৃষি কাজে মাত্রা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে তখন রেশমা জৈব সার তৈরী এবং জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ সবাইকে চমকে দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © DailyAloPratidin.com